বেণীমাধব শীল পঞ্জিকা হলো একটি ক্যালেন্ডার এর মতো বই। তার মধ্যে বাঙালি সম্প্রদায়ের শুভ তারিখ, উৎসব এবং ধর্মীয় উপলক্ষ নির্ধারণের সময় কাল সব কিছু তথ্য আমরা জানতে পারি। এই পঞ্জিকা টি ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হয়। এই ক্যালেন্ডার পদ্ধতিটি প্রাথমিকভাবে পশ্চিমবঙ্গ, বাংলাদেশ এবং বিশ্বব্যাপী বাঙালি সম্প্রদায়ের মানুষ অনুসরণ করে।
পঞ্জিকাটি তে হিন্দু উৎসব, শুভ ও অশুভ সময়, গ্রহের অবস্থান, তিথি , নক্ষত্র এবং অন্যান্য জ্যোতিষশাস্ত্রের বিবরণ সহ অনেক তথ্য থাকে। তার সাথে অনেক দেবদেবীর ছবি, বার্ষিক রাশি ফল, দৈনিক রাশি ফল, দেবদেবীর ব্রতকথা, হনুমান চালিশা ইত্যাদি সম্পর্কে জানা যায়।
Contents
- বেণীমাধব শীল ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা হনুমান চালিশা – Bengali Hanuman Chalisa according to Benimadhab Sheel Phool Panjika
- বাংলা হনুমান চালিশা ত্রিপদী – Tripodi (Bengali Hanuman Chalisa)
- বাংলা হনুমান চালিশা – সঙ্কটমোচন শ্রীহনুমানাষ্টক Sankat Mochan Shree Hanumanastak (Bengali Hanuman Chalisa)
- Related
বেণীমাধব শীল ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা হনুমান চালিশা – Bengali Hanuman Chalisa according to Benimadhab Sheel Phool Panjika
আমরা এখানে বেণীমাধব শীল ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা হনুমান চালিশা (Bengali Hanuman Chalisa) নিয়ে আলোচনা করব। যদিও বলে রাখা ভালো, বেণীমাধব শীলের পঞ্জিকা অনুযায়ী হনুমান চালিশা কিন্তু প্রকৃতপক্ষে আসল হনুমান চালিসার বাংলা অনুবাদ নয়। বরং বলা যেতে পারে বেণীমাধব শীল ফুল পঞ্জিকা অনুযায়ী বাংলা হনুমান চালিশা (Bengali Hanuman Chalisa) হলো তুলসীদাস রচিত হনুমান চালিসার ভাবানুবাদ।
আপনারা যদি সম্পূর্ণ হনুমান চালিসার বাংলা অর্থ বুঝতে চান তাহলে এই পোস্ট টি পড়তে পারেন – হনুমান চালিশা বাংলা অনুবাদ (Hanuman Chalisa Bengali)
বেণীমাধব শীল পঞ্জিকা থেকে নেওয়া বাংলা হনুমান চালিশা টি (Bengali Hanuman Chalisa) আপনাদের জন্যে এই পেজ তে দেওয়া হলো।
শ্রী গুরু চরণ পদ্ম স্মরি মনে মনে।
কোটি কোটি প্রণমিনু তাঁহার চরণে।।
শ্রীরামের চরণপদ্ম করিয়া স্মরণ।
চাতুর্বর্গ ফল যাহে লভি অনুক্ষণ।।
বুদ্ধিহীন জনে ওহে পবন কুমার।
ঘুচাও মনের যত ক্লেশ ও বিকার।।
জয় হনুমান জ্ঞান গুনের সাগর।
জয় হে কপিশ প্রভু কৃপার সাগর।। ০।।
শ্রীরামের দূত অতুলিত বলধাম।
অঞ্জনার পুত্র পবনসুত নাম।। ১।।
মহাবীর বজরঙ্গী তুমি হনুমান।
কুমতি নাশিয়া কর সুমতি প্রদান।। 2 ।।
কাঞ্চন বরণ তব তুমি হে সুবেশ।
কর্ণেতে কুন্ডল শোভে কুঞ্চিত কেশ।। ৩।।
হাতে বজ্র তব আর ধ্বজা বিরাজে।
সুন্দর গদাটি কাঁধে তোমার যে সাজে।। ৪।।
অপরূপ বাহু তব পবন নন্দন।
মহাতেজ ও প্রতাপ জগত বন্দন । ৫।।
বিদ্যাবান গুণবান তুমি হে চতুর।
শ্রীরামচন্দ্রের কার্য্যে তুমি হে আতুর ।। ৬।।
সর্বদা রামের আজ্ঞা করিতে পালন।
হৃদে রাখ সদা রাম সীতা ও লক্ষণ।। ৭ ।।
সূক্ষ্মরূপ ধরি তুমি লঙ্কা প্রবেশিলে।
ধরিয়া বিকট রূপ লঙ্কা দগ্ধ কৈলে।। ৮।।
ভীম রূপ ধরি তুমি অসুর সংহার।
শ্রীরামচন্দ্রের তুমি সর্ব কাজ কর।। ৯।।
সঞ্জীবন আনি তুমি বাঁচালে লক্ষণ।
রাঘুবীর হন তাহে আনন্দিত মন।। ১০।।
রঘুনাথ দিল তোমা আলিঙ্গন দান।
কহিলেন তুমি ভাই ভরত সমান।। ১১ ।।
সহস্র বদন তব গাবে যশ খ্যাতি।
এই বলি আলিঙ্গন করেন শ্রীপতি।। ১২ ।।
সনকাদি ব্রহ্মাদি যতেক দেবগণ ।
নারদ সারদ আদি দেব ঋষিগণ।। ১৩।।
যম ও কুবের আদি দিকপালগণে।
কবি ও কোবিদ যত আছে ত্রিভুবনে ।। ১৪ ।।
সুগ্রীবের উপকার তুমি যে করিলে
রামসহ মিলাইয়া রাজপদ দিলে ।। ১৫।।
তোমার মন্ত্রণা সব বিভীষণ মানে।
লঙ্কেশ্বরের ভয়ে সবে কম্পমান ছিল।।১৬।।
সহস্র যোজন ঊর্ধ্বে সূর্যদেবে দেখে।
সুমধুর ফল বলি ধাইলে গ্রাসিতে।।১৭।।
জয় রাম বলি তুমি অসীম সাগর ।
পার হয়ে প্রবেশিলে লঙ্কার ভিতরে ।।১৮।।
দুর্গম যতেক কাজ আছে ত্রিভুবনে ।
সুগম করিলে তুমি সব রাম গানে ।।১৯।।
চির দ্বারি আছ তুমি শ্রীরামের দ্বারে ।
তব আজ্ঞা বিনা কেহ প্রবেশিতে নারে।।২০।।
শরণ লইনু প্রভু আমি যে তোমারি।
তুমিই রক্ষক মোর আর কারে ডরি ।।২১।।
নিজ তেজ নিজে তুমি কর সম্বরণ ।
তোমার হুঙ্কারে দেখ কাঁপে ত্রিভুবন ।।২২।।
ভূত প্রেত পিশাচ কাছে আসিতে না পারে ।
মহাবীর তব নাম যেইজন স্মরে ।।২৩।।
রোগ নাশ কর আর সর্ব পীড়া হর ।
মহাবীর নাম যেবা স্মরে নিরন্তর ।।২৪।।
সঙ্কটতে হনুমান উদ্ধার করিতে ।
তাঁহার চরণে যেবা মন প্রাণ দিবে ।।২৫।।
সর্বোপরি রামচন্দ্র তপস্বী ও রাজা ।
শ্রীরামের অরিগণে তুমি দিলে সাজা।।২৬।।
তোমার চরণে যেবা মন প্রাণ দিবে ।
এ জীবনে সেইজন সদা সুখ পাবে।।২৭।।
প্রবল প্রতাপ তব হে বায়ু নন্দন ।
চার যুগ উজ্জ্বল রহিবে ত্রিভুবন।।২৮।।
সাধু সন্নাসীরে রক্ষা কর মতিমান ।
শ্রীরামের প্রিয় তুমি অতি গুণবান ।।২৯।।
অষ্টসিদ্ধি নবসিদ্ধি যাহা কিছু রয়।
সকলই সিদ্ধ হয় তোমার কৃপায়।।৩০।।
রাম রামায়ণ আছে তব নিকটেই।
শ্রীরামের দাস হয়ে রয়েছ সদাই ।।৩১।।
তোমার ভজন কৈলে রামকে পাইবে।
জনমে জনমে তার দুঃখ ঘুচে যাবে ।।৩২।।
অন্তকালে পাবে সেই রামের চরণ ।
এই সার কথা সব শুন ভক্তগণ ।। ৩৩।।
সব ছাড়ি বল সবে জয় হনুমান ।
হনুমন্ত সর্বসুখ করিবে প্রদান ।।৩৪।।
সর্ব দুঃখ দূরে যাবে সঙ্কট কাটিবে।
যেইজন হনুমন্তে স্মরণ করিবে ।। ৩৫।।
জয় জয় জয় জয় হনুমান গোঁসাই ।
তব কৃপা ভিন্ন আর কোনো গতি নাই ।।৩৬।।
যেইজন শতবার ইহা পাঠ করে।
সকল অশান্তি তার চলে যায় দূরে ।।৩৭।।
হনুমান চালিশা যে করেন পঠন ।
সর্বকার্য্যে সিদ্ধিলাভ করে সেইজন ।।৩৮।।
তুলসীদাস সর্বদাই শ্রীহরির দাস ।
মনের মন্দিরে প্রভু কর সদা বাস ।।৩৯।।
হনুমান চালিশা হল হিন্দু ভক্তিমূলক স্তোত্র যা ভগবান হনুমানকে উৎসর্গ করা হয়েছে। হিন্দুধর্মের দেবতা হনুমান তাঁর ভক্তি, শক্তি এবং আনুগত্যের জন্য পরিচিত।
আধ্যাত্মিক সান্ত্বনা, শক্তি এবং আশীর্বাদ পাওয়ার জন্য হনুমানের ভক্তদের দ্বারা হনুমান চালিশা ব্যাপকভাবে পাঠ করা হয়। ভক্তরা প্রায়ই নিয়মিত হনুমান চালিশা পাঠ করেন, বিশেষ করে মঙ্গলবার, কারণ এটি নেতিবাচক শক্তি থেকে সুরক্ষা প্রদান করে, সাহস জাগিয়ে তোলে এবং অসুবিধাগুলি কাটিয়ে উঠতে আশীর্বাদ নিয়ে আসে বলে বিশ্বাস করা হয়। হনুমান জয়ন্তী এবং অন্যান্য শুভ অনুষ্ঠানে চালিশা পাঠ করা হয়। হনুমান চালিশার পাঠ আধ্যাত্মিকভাবে উপকারী এবং মনে করা হয় যে এটি মনের শান্তি, শক্তি এবং জীবন থেকে বাধা দূর করে।
চালিশাটি তে ভগবান হনুমান এবং তার শক্তি, বুদ্ধিমত্তা এবং ভক্তি দিয়ে শুরু হয়। চালিশার মধ্যে প্রতিটি শ্লোক বা চৌপাই হনুমানের সম্পর্কে বর্ণনা করে, যেমন রামায়ণে তার ভূমিকা এবং ভগবান রামকে সেবা করার জন্য তার অটল প্রতিশ্রুতি।
বাংলা হনুমান চালিশা ত্রিপদী – Tripodi (Bengali Hanuman Chalisa)
পবন নন্দন, সঙ্কট হরণ,
মঙ্গল মূরতি রূপ।
শ্ৰীরাম লক্ষণ, জানকী রঞ্জন,
তুমি হৃদয়ের ভূপ ।।
পবন নন্দন, প্রবল বিক্রম,
রাম অনুগত অতি।
চালিশা হেথায়, সমাপন হয়,
পদে থাকে যেন মতি।।
– ইতি শ্রীহনুমান চালিশা –
বাংলা হনুমান চালিশা – সঙ্কটমোচন শ্রীহনুমানাষ্টক Sankat Mochan Shree Hanumanastak (Bengali Hanuman Chalisa)
জয় জয় মহাবীর হনুমান জয়।
ভক্তি শিক্ষা করি প্রভু তোমার কৃপায়।।
বাল্যকালে দিবাকরে করিলে ভক্ষণ।
তাহে অন্ধকার হৈল এই ত্রিভুবন। ।
ত্রাসেতে ত্রিলোক সব কাঁপে থর থরে ।
কোন বা এমন হৈল সবে চিন্তা করে।।
দেবগন আসি তোমা মিনতি করিলে ।
রবি ছাড়ি জগতের কষ্ট নিবারিলে ।।
কেহ জানিত না কপি নামটি তোমার।
সঙ্কট মোচন নাম হয় যে তোমার।।১।।
কলির ত্রাস যে তুমি গিরি বাসকারী।
জন্মবিধি প্রভু তোমা সন্ন্যাসী নেহারি ।।
সহসা মহামুনি তোমা শাপ দিলে।
কি জানি কি বিচার তুমি করেছিলে।।
পরম দয়াল তুমি জানে সর্বজন।
এ দাসের দুঃখ তুমি কর নিবারণ ।।২।।
অঙ্গদেরে সঙ্গে লয়ে সীতা অন্বেষণে।
সন্ধান করিলে তুমি ফিরি বনে বনে ।।
পাহাড় পর্বতে তুমি ঘুরিয়া ঘুরিয়া।
মহাসাগরের তীরে রহিলে বসিয়া ।।
বানরগণেরে তুমি দিলে আশ্বাসন।
কৃপা করি করো মোর সঙ্কট মোচন।।৩।।
জয় রাম বলি তুমি এক লম্ফ দিলে।
আকাশ পথেতে তুমি লঙ্কায় চলিলে।।
শেষে লঙ্কা রাজ্যে গিয়া দিলে দর্শন।
করিতে লাগিলে তুমি সীতা অন্বেষণ ।।
অশোক কাননে সীতা পাইলে দেখিতে।
আমারে রক্ষহ তুমি এই সঙ্কটেতে ।।৪।।
রামের অঙ্গুরী দিয়া জানকীর করে।
প্রণাম করিয়া দাঁড়াইলে এক ধারে। ।
চেরীগণ মুখে রাবন পাইল শুনিতে।
দূতগনে পাঠাইল বাঁধিয়া আনিতে।।
সূক্ষ্ম দেহে মহাবীর তুমি দিলে ধরা।
আমার সঙ্কট প্রভু দূর কর ত্বরা ।।৫।।
অতঃপর বিরাট রূপ করিলে ধারণ।
যত বস্ত্র ছিল ল্যাজে বাঁধে দূতগণ।।
তাহে অগ্নি জ্বালাইল রাবণ আদেশে।
তুমি জয় রাম বলি উঠিলে আকাশে। ।
সে আগুনে সারা লঙ্কা করিলে দাহন।
এ দাসের কর প্রভু সঙ্কট মোচন। ।৬।।
অশোক কাননে তুমি এলে পুনরায়।
লঙ্কা দগ্ধ এ সংবাদ জানালে সীতায়।।
শুনিয়া জনকসুতা আনন্দিত হৈল ।
বর দিয়া তোমার অগ্নি জ্বালা নিবারিল।।
আম্রকুঞ্জে ঢুকি সব কৈলে খান খান।
মোরে তুমি এ সঙ্কটে কর পরিত্রান ।।৭।।
সীতার সন্ধান লয়ে ফিরিয়া আসিলে।
শ্রীরামের শ্রীচরণে সকলি জানালে।।
অতঃপর করা হলো সাগর বন্ধন।
লঙ্কাপুরী প্রবেশিলে লয়ে সৈন্যগণ ।।
মৃত সঞ্জীবনী আনি লক্ষণে বাঁচাও।
কৃপা করি এ দাসের সঙ্কট ঘুচাও।।৮।।
জয় জয় মহাবীর হনুমান জয়।
ভক্তিরূপ শিক্ষা দিলে জগতে সবায় ।।
জয় জয় বজরঙ্গী চির ধন্য তুমি।
তোমার চরণে সদা প্রণত যে আমি।।
তুমি হও শ্রেষ্ঠ ভক্ত বিশ্ব চরাচরে।
রামরূপ দেখাইলে হৃদয় মাঝারে ।।
নিজ বক্ষ নিজে তুমি করি বিদারণ।
তার মাঝে রামরূপ করালে দর্শন ।।
হনুমানাষ্টক হেথা সমাপ্ত হইলো ।
জয় রাম জয় হনুমান ভক্তগণ বল।।
বাংলা হনুমান চালিশা দৈনন্দিন পাঠ করলে অনেক উপকার পাওয়া যায়। বাংলা হনুমান চালিশা পাঠ করার উপকারিতা – Benefit of Reciting Hanuman Chalisa in Bengali এই নিবন্ধটি পড়লে আপনার হনুমান চালিশা পাঠ করার প্রতি যথেষ্ট বিশ্বাস ও অনুপ্রেরণা জন্মাবে।
বলা বাহুল্য হনুমান চালিশা পাঠ করার তেমন কিছু বিধি নিষেধ নেই, কিন্তু একটু নিয়মানুবর্তিতার মাধ্যমে হনুমান চালিশা পাঠ করলে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়। তাই হনুমান চালিশা পাঠ করার নিয়ম গুলো (Discipline for Reciting Hanuman Chalisa) জেনে নিন।